ঢাকা , বৃহস্পতিবার, ১০ এপ্রিল ২০২৫ , ২৬ চৈত্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ই-পেপার
সংবাদ শিরোনাম
ফসলের উৎপাদন খরচ খুঁজতে ভ্রমণ ব্যয়ই ১০ কোটি টাকা বিভিন্ন ইস্যুতে সংঘটিত হচ্ছে লুটপাট-সহিংসতা প্রশ্নফাঁসের গুজব ঠেকাতে মনিটরিং টিম ট্রাম্পের চড়া শুল্ক কার্যকরে দিশেহারা বিশ্ব বাংলাদেশকে দেয়া ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করেছে ভারত বিএসএফ’র বিরুদ্ধে বাংলাদেশিকে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ মাইনরিটি দলকে নিবন্ধন দিল ইসি রাজবাড়ীর চরে আগুনে ছাই ঘরবাড়িসহ ১২ গরু চট্টগ্রামে আগুনে পুড়েছে ৩ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ১৩ ঘর হারাম টাকা দিয়ে ইবাদত হয় না-ধর্ম উপদেষ্টা ব্যবসায়ীকে কুপিয়ে জখম বাবা-মেয়ে কারাগারে চাঁদপুরে পুকুরে ডুবে মা-ছেলেসহ ৩ জনের মৃত্যু এস আলমের ৯০ বিঘা জমি জব্দ স্থবির এলজিইডি ঢাকা জেলা গাজার প্রতি সংহতি জানিয়ে বৃহস্পতিবার র‌্যালি করবে বিএনপি আমদানি বৃদ্ধিতে বেড়েছে চট্টগ্রাম কাস্টমসের রাজস্ব কাস্টমস্ কর্মকর্তার অঢেল সম্পদ! অর্থ পাচারকারীদের জীবন কঠিন হবে-গভর্নর পোশাকশ্রমিক-আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সংঘর্ষ, আহত ৫০ অপরাজেয় বায়ার্নকে রুখে দিলো ইন্টার মিলান

রাজধানীর যানজট নিরসনে বিশেষজ্ঞদের ৬ অভিমত

  • আপলোড সময় : ০৫-১০-২০২৪ ০৪:১৬:১৬ অপরাহ্ন
  • আপডেট সময় : ০৫-১০-২০২৪ ০৪:১৬:১৬ অপরাহ্ন
রাজধানীর যানজট নিরসনে বিশেষজ্ঞদের ৬ অভিমত
যানজট ঢাকাবাসীর নিত্যসঙ্গী। রাজধানীর সড়ক-মহাসড়কে যানজট পরিস্থিতি গত দুই মাসে ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে। এই পরিস্থিতিতে যানজট থেকে মুক্তির জন্য নতুন পরিকল্পনা নিচ্ছে অন্তর্বর্তী সরকার। এ লক্ষ্যে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) দুই বিশেষজ্ঞের সঙ্গে আলোচনা করেছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। মূল সড়ক থেকে অবৈধ রিকশা সরানোসহ ছয়টি সুপারিশ করেছেন তারা। এখন এসব সুপারিশের ভিত্তিতে পরিকল্পনা নিয়ে সামনে অগ্রসর হচ্ছে বর্তমান সরকার।
সূত্র জানায়, বুয়েটের পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক মোয়াজ্জেম হোসেন ও অধ্যাপক হাদিউজ্জামান গত ১৬ সেপ্টেম্বর প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে তার সরকারি বাসভবনে দেখা করেন। সেখানে যানজট সমস্যা নিরসনে করণীয় নিয়ে ৪০ মিনিট আলোচনা করেন তারা। প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে যানজট নিরসনে ছয় দফা সুপারিশ দিয়েছেন বুয়েটের দুই অধ্যাপক। এর আগে থেকেই প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী (প্রতিরক্ষা ও জাতীয় সংহতি উন্নয়নবিষয়ক) লে. জেনারেল (অব.) আব্দুল হাফিজ দুবার বুয়েট ক্যাম্পাসে এই দুই অধ্যাপকের সঙ্গে দেখা করেন।
বুয়েটের বিশেষজ্ঞদের ঢাকার যানজট নিরসনের লক্ষে দেয়া সুপারিশ হচ্ছে-এক. মূল সড়ক থেকে অবৈধ রিকশা (ব্যাটারি ও প্যাডেল) সরাতে হবে। দুই. পুলিশের সাধারণ কার্যক্রম ৫ আগস্টের আগে যেমন ছিল, সেই অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে হবে। তিন. ছোট যেসব ইন্টারসেকশন (মোড়) আছে, সেখানে সিগন্যালের সময় সর্বোচ্চ দুই মিনিট আর বড় ইন্টারসেকশনে সিগন্যাল সর্বোচ্চ পাঁচ মিনিটের বেশি দেয়া যাবে না। চার. ছোট ইন্টারসেকশনের ৫০ মিটার ও বড় ইন্টারসেকশনের ১০০ মিটারের মধ্যে কোনো গাড়ি পার্ক করা, যাত্রী ওঠানামা, থামানো যাবে না। পাঁচ. ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) ও দুই সিটি করপোরেশন থেকে নির্ধারিত বাস স্টপেজ ছাড়া যাত্রী ওঠানামা করা যাবে না এবং এসব স্টপেজে একটার পাশে আরেকটা বাস দাঁড়ানো যাবে না। ছয়. ঢাকা শহরে ট্রাফিক পুলিশের যে আটটি বিভাগ রয়েছে, এই বিভাগগুলোর প্রতিটিতে একটি করে মোবাইল টিম কাজ করবে। এই মোবাইল টিমে প্রশিক্ষিত একজন ট্রাফিক ইঞ্জিনিয়ার, একজন ট্রাফিক পুলিশ কর্মকর্তা, ডিটিসিএ ও সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তা থাকবেন। তাদের কাজ হবে ঘুরে ঘুরে সমস্যা দেখা ও সেগুলো সমাধানে কাজ করা।
ছয়টি সুপারিশ ও কার্যক্রম নিয়ে বুয়েটের অধ্যাপক হাদিউজ্জামান বলেন, গত দেড় মাসে ঢাকার আশপাশে থেকে ছয় থেকে সাত লাখ ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা ঢাকায় প্রবেশ করেছে। ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা পুরোপুরি অবৈধ। এগুলোর যে চার্জিং স্টেশন আছে, সেগুলোও সরাতে হবে। ঢাকার ট্রাফিক সিগন্যালে সাধারণত দেখা যায়, একটি সিগন্যাল প্রায় ১০ থেকে ১৫ মিনিট ছেড়ে দেয়া হয়েছে, এটা অবৈজ্ঞানিক।
এই বিশেষজ্ঞ বলেন, যেসব সুপারিশ করা হয়েছে, এগুলোতে টাকা খরচ হবে না। এটা তাৎক্ষণিক একটা সমাধান। এগুলোতে প্রধান উপদেষ্টা খুশি হয়েছেন। তিনি পুলিশকে এসব বিষয় নিয়ে কাজ করতে বলেছেন। আগামী এক মাসের মধ্যে একটা করিডর নিয়ে কাজ শুরু হবে। এই করিডর হবে হাইকোর্ট থেকে শুরু করে মহাখালী হয়ে আবদুল্লাহপুর পর্যন্ত। পাইলট প্রকল্পে সিগন্যাল নিয়ে কাজ করা হবে কারওয়ান বাজার মোড়ে।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, বুয়েটের অধ্যাপকদের করা সুপারিশের ভিত্তিতে আগামী এক মাসের মধ্যে একটি পাইলট প্রকল্প হাতে নেয়া হবে। এই প্রকল্পের শুরুতে হাইকোর্ট মোড় থেকে কাকরাইল, কারওয়ান বাজার, মহাখালী, বিমানবন্দর হয়ে আবদুল্লাহপুর পর্যন্ত কাজ করা হবে। সোনারগাঁও হোটেলের মোড়ে ট্রাফিক সিগন্যাল কার্যকর করা হবে। এই ট্রাফিক সিগন্যাল তৈরি করা হবে বুয়েট থেকেই। কারণ, প্রধান উপদেষ্টা ট্রাফিক সিগন্যাল দেশেই তৈরি করার কথা জানিয়েছেন। তিনি বুয়েটের দুই অধ্যাপককে বুয়েট থেকেই সিগন্যাল বানানোর কথা বলেন। বুয়েট জানিয়েছে, তারা এটা তৈরি করতে পারবে। এ জন্য হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যার তৈরির কাজ শুরু করেছে বুয়েট। এখানে খরচ কম হবে আর দেশীয় প্রযুক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে। এসব সিগন্যাল তৈরির জন্য বুয়েট প্রতিটি সিগন্যাল বানানো, ইনস্টল করার জন্য সাড়ে ১০ লাখ টাকা ও মাসে রক্ষণাবেক্ষণের জন্য দেড় লাখ টাকা চেয়েছে।
এদিকে বিশেষজ্ঞদের দেয়া সুপারিশ বাস্তবায়ন করার লক্ষ্যে গত ২৯ সেপ্টেম্বর বুয়েট, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি), ডিটিসিএ ও সিটি করপোরেশনের একটি দল প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে। এই দলে ১৮ জন সদস্য ছিলেন। তাদের মধ্যে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মীর খায়রুল আলমসহ সাতজন, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) প্রধান নির্বাহী মিজানুর রহমানসহ দুজন, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার মো. মাইনুল হাসানসহ চারজন, ডিটিসিএর প্রধান নির্বাহী নীলিমা আক্তারসহ তিনজন সদস্য ছিলেন।
ডিএমপির ট্রাফিক সূত্রে জানা যায়, ১০ অক্টোবর থেকে কারওয়ান বাজারে বুয়েটের তৈরি সিগন্যাল নিয়ে কাজ শুরু হবে। এই সিগন্যাল এইআইভিত্তিক (আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স) নয়। এখানে চাইলে সময় নির্ধারণ করা যাবে, যেটি ট্রাফিক পুলিশ রিমোট ব্যবহার করেই করতে পারবে।
অধ্যাপক হাদিউজ্জামান বলেন, সরকারকে একটি কোম্পানি গঠন করতে হবে। ঢাকা শহরে এই কোম্পানির বাইরে কোনো বাস চলতে পারবে না। এখন বেসরকারি যেসব বাস রয়েছে, তারা হয় এই কোম্পানির কাছে বাস দিয়ে অংশীজন হবে, নয়তো কোম্পানির কাছে বাস বিক্রি করে দেবে। প্রাথমিকভাবে এসব বাস উন্নত করা হবে। এই কোম্পানির আওতায় চলা সব বাসের মান হবে মেট্রোরেলের বগির মতো।
এ বিষয়ে ডিএমপি (ট্রাফিক) অতিরিক্ত কমিশনার খোন্দকার নজমুল হাসান বলেন, আমরা ছয়টি সুপারিশ নিয়ে কাজ করছি। এর মধ্যে প্রথম চারটি সুপারিশ নিয়ে ইতিমধ্যে কাজ শুরু হয়েছে। বাকি দুটি সুপারিশ নিয়ে কাজ চলছে। ট্রাফিক সিগন্যাল নিয়ে পাইলট প্রকল্প চালু হলে কাজ শুরু হবে। আর মোবাইল টিম গঠন প্রক্রিয়াধীন।
ডিটিসিএর বাস রুট রেশনালাইজেশন প্রকল্পের পরিচালক ধ্রুব আলম জানান, তারাও চান, এই সুপারিশগুলো নিয়ে কাজ করতে। যদি ঠিকভাবে সমন্বয় করে কাজ হয়, তবে যানজট সমস্যার সমাধান হবে।
ট্রাফিক সিগন্যালে আগে যে প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে, সেগুলো দেশের বাইরে থেকে আনা। এগুলোর খরচ অনেক বেশি, আবার নষ্ট হলে সেগুলো ঠিক করতে অনেক অপেক্ষা করতে হচ্ছে। এভাবে সিগন্যালগুলো অকার্যকর হয়ে যাচ্ছে। এখন বুয়েটে যেগুলো তৈরি করা হবে, তাতে খরচ অনেক কম পড়বে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এগুলোর আয়ুষ্কাল হয়তো বাইরের মতো হবে না। তবে নষ্ট হলে দ্রুত ঠিক করা যাবে।
বুয়েটের বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পিক আওয়ারে ঢাকায় অটোমেটেড সিগন্যাল কাজ করবে না। যারা অতীতে এসব সিগন্যাল এনে কাজ করেছে, সেটা আসলে বিজ্ঞানের সঙ্গে যায় না। কারণ, গাড়ির সংখ্যা যখন বেশি হবে, তখন ম্যানুয়ালি কাজ করতে হবে। পৃথিবীর অনেক বড় শহরে পিক আওয়ারে হ্যান্ড সিগন্যাল ব্যবহার হয়। পাইলট প্রকল্পে সিগন্যাল দুভাবে কাজ করবেÑএকটি ম্যানুয়াল এবং আরেকটি অটোমেটেড।
ঢাকার গণপরিবহনের মধ্যে সবচেয়ে কার্যকর হলো মেট্রোরেল। তবে এটি সুদূরপ্রসারী প্রকল্প। একটি মেট্রোরেল হয়েছে, আরও দুটি মেট্রোরেল ২০২৭ সালের মধ্যে হওয়ার কথা। বাকি সব জায়গায় বাস চলাচল করে। এ জন্য বাস রুটকে ঢেলে সাজানোর কথা বলেছেন বিশেষজ্ঞরা।
 

নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata

কমেন্ট বক্স